গল্প: চোর খায় কলা,
চোরের বড় গলা। (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লেখক: ফরিদুল ইসলাম
সূর্য
আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমি একটা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নজরানা বিভাগের ছাত্র
ছিলাম, আর একটা কথা! ঐ প্রতিষ্ঠানে ওই বছরে সব থেকে কম বয়সী ছাত্রটাও আমি ছিলাম। আর
সবার বয়সে ছোটো হওয়ায় হুজুর সহ সবাই আমাকে খুব ভালোবাসতো।
একদিন সকালের ক্লাস শেষে মোহতামিম হুজুর সবাইকে ক্লাসের মধ্যেই জিজ্ঞেস
করতেছিলেন, টাকা কে চুরি করলো?
অর্থাৎ মাদ্রাসার দান বক্স থেকে মাঝে মধ্যেই টাকা চুরি হতো। সেটা নিয়ে বলতেছিলেন।
কিন্তু আমরা কেউ কিছু জানতাম না এই বিষয়ে তাই কোনো কিছু বলতে পারিনি। আর
ভয় ও করছিলো এটা ভেবে যে যদি আবার জিজ্ঞেস করতে করতে মারতে শুরু করে!
ভয়ে সবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।
আসলে যে টাকা চুরি করেছে সে কিন্তু আমাদের মধ্যে যে কোনো একজন। কিন্তু আমরা
কেউ কল্পনাও করতে পারিনি যে চোর আমাদের মধ্যেই রয়েছে।
এর মঝে হুট করে একটা হিফয বিভাগের ছাত্র (সোহেল) বলে উঠলো "হুজুর সাবাইকেই
চাউল পড়ে খাওয়ান।"
হুজুর বললো " তার দরকার নেই, আমি শেষ বারের মতো সবাইকে সাবধান করে
দিলাম। যদি তোমাদের মধ্যে কেউ এই কাজ করে থাকো তাহলে আর করিও না। পরের বার যদি এমন
ঘটনা ঘটে তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সে যে-ই হও না কেন।"
এভাবে বলে তিনি চলে গেলেন, আমরা সকালের খাবার খেলাম, খাওয়ার পরে ২ ঘন্টা
ক্লাস হতো না, তাই আমরা এই সময়টাতে ঘুমাতাম।
এর কয়েকদিন পরের ঘটনা:
একদিন মাগরিবের নামাজের পরে হঠাৎই হিফয বিভাগের ঐ ছাত্রটা (সোহেল) উধাও।
কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না।
হুজুর আসার পরে ওর বাড়িতেও খোঁজ করা হলো, কিন্তু বাড়িতেও যায়নি। তাহলে গেলো
কোথায়?
হুজুর আদেশ করলেন "আল-আমিন আর ফরহাদ তোমরা দুইজন আমার সাইকেল নিয়ে
ওর বাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তা গুলোতে খুঁজতে যাও। আর বাকি সবাই পড়তে বসো।"
(আল-আমিন আর ফরহাদ ছিলো ঐ সময়ে মাদ্রাসার সিনিয়র ছাত্র।)
আমরা সবাই পড়তে বসলাম, এবং আল-আমিন ও ফরহাদ তারা হুজুরের কথা মতো বেড়িয়ে
পড়লো সেই হিফয বিভাগের ছাত্রটাকে খুঁজতে।
আমাদের মাদ্রাসাটা বাজারের পূর্ব দিকে, আর ঐ ছাত্রটার বাসা বাজারের পশ্চিম
দিকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার দূরে। তো আল-আমিন ও ফরহাদ বাজার পেরিয়ে প্রায় ২-২.৫ কিলোমিটার
যাওয়ার পরে দেখতে পেলো, অন্ধকারে জমির আইল দিয়ে কেউ হেঁটে যাচ্ছে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবী
আর মাথায় টুপি। অন্ধকার হওয়ায় আল-আমিন আর ফরহাদ অনুমান করতে পারেনি যে ঐটাই (সোহেল)
মাদ্রাসার উধাও হওয়া ছাত্রটা।
সন্দেহ হওয়ায় তারা হিফয বিভাগের ঐ ছাত্রর নাম ধরে একটা ডাক দিলো আল-আমিন...
"ঐ সোহেল, ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস...!"
সোহেল পিছন ফিরে একবার তাকিয়ে পাঞ্জাবি তুলে ধরে, দৌড় দিতে লাগলো। আর জমিতে
সদ্য ধান রোপণ করা জমি যেন আবার পুনরায় মই দিতে হবে। এমন অবস্থা করেছে।
আল-আমিন আর ফরহাদের বুঝতে বাঁকি রইলো না যে ওটাই সোহেল।
এবার এরাও সাইকেল রোডে ফেলে রেখে সোহেলের পিছনে দৌড় দিতে লাগলো। প্রায় ০.৫
কিলোমিটার দৌড়ানোর পরে তাকে ধরতে সক্ষম হয়। এবং সেই সাইকেলে করে তাকে মাদ্রাসায় নিয়ে
আসে ও হুজুর কে কল দেয়।
তারপর হুজুর এসে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ করিয়ে ওকে জিজ্ঞেসাবাদ শুরু করে।
হুজুর: কিরে সোহেল, নামাজের পড়ে সবাই মাদ্রাসায় আসছে তুই আসিস নি কেন?
সোহেল: আমি অসুস্থ, তাই বাড়িতে যাইতেছি।
হুজুর: তুই অসুস্থ, বাড়িতে যাবি তো আমাকে বলিস নি কেন?
সোহেল: (মাথা নিচু করে চুপ হয়ে
আছে।)
হুজুর: কিরে কথা বলিস না কেন?
সোহেল:
হুজুর: আর তোর কি অসুখ বল তো ডাক্তার কে ডাকি।
সোহেল:
এভাবে আরও ২-১ প্রশ্ন করলো কিন্তু সোহেল কোনো উত্তর দিলো না। হুজুর এবার
বেশ রেগে গেলেন। এর মধ্যেই মাদ্রাসার নতুন ছাত্র (দাউদ) এসে বললো হুজুর দান বক্স এর
তালা ভাঙা।
হুজুর আরও রেগে গেলেন আর সোহেলের তল্লাশি নিলেন, আর সোহেলের পাঞ্জাবীর পকেট
থেকে কিছু টাকা বের করলেন। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন "এগুলো কোন টাকা?"
সোহেল: আমার টাকা।
হুজুর কোথায় পেলি?
সোহেল:
হুজুর: কেউ ব্যাত টা নিয়ে আয় তো। এভাবে ওর মুখ থেকে সত্যি কথা বের হবে না।
সোহেল: এগুলো আমার টাকা, আমি এগুলো একজনের কাছে নিয়েছি।
হুজুর: কার কাছ থেকে?
সোহেল:
হুজুর: তারাতাড়ি উত্তর দে। এগুলো তুই দান বক্স
থেকে চুরি করেছিস তাই না? আর সেদিন কি বললি সবাইকে চাউল পড়া খাওয়াইতে? আজকে তোর অবস্থা
খারাপ করেই ছাড়বো।
তোর মতো চোরকে এই মাদ্রাসায় রাখা যাবে না। তোর বাবা-মা এখানে তোকে চুরি
করতে পাঠাইছে হারামজাদা...!
এবার সোহেলও রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলছে "আমি চুরি করি নাই, আমাকে চোর
বলবেন না।
হুজুর: তোকে চোর বলবো না তো কি পীর সাহেব বলবো?
সোহেল কান্না গলায় চেচিয়ে "আমি তো চোর করি নাই।"
হুজুর: তাহলে টাকা পেলি কোথায়?
সোহেল: আমি দান বক্স থেকে নিয়েছি।
হুজুর: তাহলে কি তুই চুরি করিস নি?
সোহেল: বারবার আমাকে চোর বলছেন কেন? আমি কি চুরি করছি নাকি? আমি তো দান
বক্স থেকে নিয়েছি।
হুজুর আরও রেগে গেলো, আর বললো "শিকল এনে ওকে জানালার রড এর সাথে তালা
দিয়ে রাখো আর ওর বাড়িতে খবর দাও। এমন ভালো পরিবারে এমন চোরের জন্ম হলো কি করে? অবাক
লাগছে হলাম আমি। আমার এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক ছাত্র হাফেজ হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ
এমন ছিলো না। "
এই কথা শুনে আবারও
সোহেল: হুজুর আপনি কিন্তু এটা ঠিক করছেন না, আপনি আমাকে সেই কখন থেকে চোর
বলেই যাচ্ছেন। আপনি ডাকেন আমার আব্বাকে।।
হুজুর রেগে গিয়ে সোহেলকে একটা চড় মেরে দিলেন, আর সেখান থেকে বের হয়ে এসে
আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন : আর এরকম ভুল যেন কেউ না করে সবাই সাবধান হয়ে যাও।
আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
"দেখলেন জেঠো? চোর খায় কলা চোরের বড় গলা!"
বিঃদ্রঃ যদিও এই গল্পটি সম্পুর্ন সত্য ঘটনা অবলম্বন লেখা, এবং সকল চরিত্র
ও পদ গুলিও বাস্তব। তবে এই গল্পে ব্যাবহার করা ব্যক্তির নাম গুলো সম্পুর্ন কাল্পনিক।
এই গল্পের সাথে কারোর জিবনের সাথে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেলে, আমি তার জন্য আন্তরিক ভাবে
দুঃখীত। এই গল্পটি প্রচার করে কাউকে কষ্ট বা আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিলো না, আমার
উদ্দেশ্য কেবলমাত্র বিনোদন এবং শিক্ষা দেওয়া, এবং সেই সাথে ভালো কিছু অর্জন করতে অনুপ্রেরণা
দেওয়া। আমি আশাবাদী এই গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনার সম্পুর্ন সাপোর্ট পাবো
ইনশাআল্লাহ। ধন্যবাদ সবাইকে
0 coment rios: