সোমবার, মার্চ ১১, ২০২৪

সেহরি ও ইফতারে কি খাবেন এবং কি খাবেন না : ডাঃ রোকসানা ইয়াসমিন রোকেয়া


সেহরি ও ইফতারে কি খাবেন এবং কি খাবেন না ?

রমজান প্রায় এসেছে। আমিও কয়েক দিন বিজি থাকবো বলে পোষ্ট টি করে রাখলাম।লেখাটি একটু বড়, তাই কপি শেয়ার করে টাইম লাইনে রেখে দেন সময় করে পড়ে নিবেন। 


রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের খাবারের ব্যাপারে সবাই একটু সতর্ক থাকেন। সবাই রোজার সময় অন্য সময়ের চেয়ে একটু ভালো খেতে চান। তবে ভাঁজা পোড়া আর তৈলাক্ত খাবারের ভীড়ে আপনার খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। রমজান মাসে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সবার জন্য সেহরি ও ইফতারে কোন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার রাখবেন।


তাহলে দেখে নিন সেহরি ও ইফতারে কি খাবেন এবং কি খাবেন না। সেহরিতে এমন ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যা রোজাদারকে অনেক বেশি সময় ধরে শক্তির জোগান দিয়ে কর্মচঞ্চল রাখতে পারে। এমনকি পরিপাকতন্ত্রের ওপর কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি না হয়। তাহলে এবার জেনে নিন রোজার দিনে সেহরিতে কেমন খাবার খাওয়া উচিত।


সেহরিতে ভাত, আটার রুটি, বাদাম, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাওয়া উত্তম, কারণ এ ধরনের খাদ্য হজম হতে বেশি সময় নেয় বলে রোজাদার ব্যক্তির ক্ষুধার অনুভূতি কম হয়। এবং রক্তে চিনির পরিমাণও তাড়াতাড়ি বাড়ে না।


সেহরিতে মাছ, মাংস, ডাল, সবজি ও ফলমূল এবং দুধ-দধি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যসম্মত এবং এগুলি রোজা পালনকারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার।সেহরিতে তাজা ফলের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে শাক সবজি খাবেন। সেহরিতে ফলমূল ও শাক সবজি বেশি গ্রহণ করলে সারাদিন শরীর কর্মক্ষম থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাছাড়া এসময় দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন।এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।


সেহরিতে কি খাবেন না ?খুব বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছামত উদরপূর্তি করে খাবেন না। এতে বদ হজম ও পেটের সমস্যা হতে পারে।

সেহরিতে এমন কিছু খাওয়া ঠিক না যা খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেহেরিতে ভাজা পোড়া এবং বেশি তেল জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো।

সেহরির সময় চা বা কফি অথবা সফট ড্রিকংস গ্রহণ না করাই উত্তম। কারণ এসব খাবার প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায় ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে।


সেহরির সময় অত্যধিক তেলচর্বি জাতীয় (পোলাও, বিরিয়ানি, পরটা, মোগলাই, হালিম, তেহেরি, আইসক্রিম, কেক) খাবার না খাওয়াই উত্তম। কারন এসব খাবার পেটে গ্যাসের সমস্যা এবং বদ হজমের সৃষ্টি করতে পারে।সেহরিতে কম মশলাযুক্ত খাবার খেতে হবে, অধিক মশলাযুক্ত খাবারে হজমের সমস্যা ও পেটে গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।


ইফতারিতে কি খাবেন?ইফতারিতে আমরা যে খাবার খাই তা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। কারন অস্বাস্থ্যকর খাবার আপনাকে রোজার সময় অসুস্থ করে দিতে পারে, তাই ইফতারি হতে হবে স্বাস্থ্য সম্মত এবং রুচিশীল।


ইফতারি শুরু হওয়া উচিত পানি জাতীয় খাবার দিয়ে। সেটা বিভিন্ন ধরনের ফলের শরবত হতে পারে। ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। কারন এতে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খণিজ, যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে।তাই ইফতারে বিভিন্ন রকমের সিজনাল ফল রাখা ভালো। বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, আনারস, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, আঙ্গুর, কমলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আপেল ইত্যাদি ফল খাওয়া উত্তম।

ইফতারে পরিমাণ মত খেজুর খেতে পারেন।


 (ডায়াবেটিস না থাকলে)। সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেজুর সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।পরিমাণ মত ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই ও চিঁড়াও খেতে পারেন এ সময়।


সেহরি এবং ইফতারির সময় প্রচুর পানি পান করবেন। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে।

ইফতারের তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার পর রাতের খাবার খাবেন। ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস রাখবেন খাবারের তালিকায়। সবজি ঝোল করে খাবেন। সহজে হজম হয় এবং আঁশ যুক্ত খাবার খাবেন।


ইফতারে কি খাবেন না ? অনেকে ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। তারা মনে করেন, সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু ইফতারে অতি তাড়াতাড়ি বেশি খাদ্য গ্রহণ বুকজ্বালা, ঢেঁকুর উঠা, পেটে এসিড বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি জটিলতার সৃষ্টি করে থাকে। সে জন্য প্রথমে অল্প কিছু ইফতারি খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে নামাজ পরে তারপর আবার খাবেন।


বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, সেসব অবশ্যই পরিহার করবেন।পেয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, হালিম, বড়া, রোস্ট, কাবাব, পাকুরা ইত্যাদি তেল জাতীয় খাবার ইফতারে খাওয়া উচিত নয়। কারণ রোজা রেখে, সারাদিন খালি পেটে এসব খাবার মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো মুখরোচক হলেও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খাদ্য ইফতারের সময় খুব কম পরিমানে খেতে হবে। এবং এসব খাবারের সাথে বেশি বেশি ফলমূল খেতে হবে।বেশি পরিমাণে চিনি ও গুড় মিশ্রিত শরবত ফ্রুট জুস, সফ্ট ড্রিংকস গ্রহণ না করাই ভালো।ইফতারিতে কোনোভাবেই তেল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা সঠিক হবে না। সারাদিন খালি পেটে থাকার পর আমাদের ক্যালরি, প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উত্তম।

কলমে: রোকসানা ইয়াসমিন রোকেয়া


শেয়ার করুন

Author:

Publisher and dashboard panel controller, NB Article | বাংলা

0 coment rios: