সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ১৫১টি আসন পেলে সরকার গঠন করতে পারে একটি রাজনৈতিক দল। এর চেয়ে কম আসন পেলে অন্য দলগুলোর সমর্থনের দরকার পড়ে। এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পাবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্লামেন্টই ঠিক করবে কে বিরোধী দল হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরকার গঠনের আমন্ত্রণ পাবেন।
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ৩০০ আসনের মধ্যে প্রার্থী মারা যাওয়ায় একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত এবং গোলযোগের কারণে আরেকটি আসনের ফলাফল স্থগিত হয়েছে।
সংসদে বিরোধী দল কে হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, লিডার অব দ্য হাউস অর্থাৎ যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনিই পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বুঝে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন।
জাতীয় পার্টি বিরোধী দল না হলে : রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, যদি জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকার সুযোগ না পায় তাহলে বিকল্পও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ন্যূনতম আসন পাওয়া কোনো দল যেমন জাসদ, কল্যাণপার্টি বা ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে জোট করেও বিরোধী দলে যেতে পারে। এ অবস্থায় যে দলের সঙ্গে জোট হবে ওই দলের প্রধান বিরোধী দলের নেতা হতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলে থাকার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানাতে হবে। অথবা স্বতন্ত্রদের নিয়ে করা কোনো মোর্চার আসনসংখ্যা জাতীয় পার্টির চেয়ে বেশি হতে হবে। সেটি হলে আসনসংখ্যার ভিত্তিতে গঠিত মোর্চা সংসদে বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত বেশির ভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এই বিকল্প বিরোধী দলের বিষয়টি বাস্তবে ঘটবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
কে কখন বিরোধী দলে : বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চার বছরের শাসনামল বাদ দিলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসনকাল ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। সংসদীয় রাজনীতিতে মূলত ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই শক্তিশালী বিরোধী দল কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করে দেশে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকারে গেলেও ওই সংসদে ৮৮টি আসন নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সপ্তম জাতীয় সংসদে বিএনপি ১১৬ আসন নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৬২টি আসন নিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। এরপর ২০০৭ সালে দেশে এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নবম সংসদ নির্বাচন হয়, সেখানে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে। বিএনপি মাত্র ৩০ আসন নিয়ে বিরোধী দলে যায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে ওই সংসদে প্রথমবারের মতো জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি আসন। বাকি তিনটি আসন পায় অন্যরা। নির্বাচনে সরকারের জোটসঙ্গী হওয়ার পরও ওই সংসদে জাতীয় পার্টি ২২ আসন নিয়ে বিরোধী দলে যায়। রওশন এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা।
0 coment rios: