গত ১৭ নভেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে মরদেহ পাওয়া তানভীর (২৪) খুন হয়েছিলেন মাদক ব্যবসায়ীদের হাতেই। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তানভীর নিজেও একসময় মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরে সেখান থেকে সরে আসেন। এরপর মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভিন্ন সময় তথ্য দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
১৬ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে বের হন তানভীর। রাতে তিনি বাসায় ফেরেননি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন সকালে পল্লবীর সিটি করপোরেশনের বহুতল ভবনের নিচে তানভীরের মরদেহ পাওয়া যায়। ওই মার্কেট নির্মাণের পর থেকে খালি পড়ে আছে।
এ ঘটনায় তানভীরের পরিবার হত্যা মামলা করে। তানভীর পরিবারের সঙ্গে পল্লবীতে থাকতেন।
পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের বিষয়ে র্যাব ও পুলিশকে তথ্য দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তানভীরকে ডেকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে চারতলা থেকে ফেলে দেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, নিচে পড়ে থাকা তানভীরের দুই পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। মাথার বাঁ পাশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলায় তিন বিহারি যুবককে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন জুয়েল (২৪), কাল্লু ওরফে জাহিদ (২৩) ও রহিদ ওরফে বাহুবলী (২০)। তাঁদের মধ্যে জুয়েল সম্প্রতি ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তিনজনই আদালতে নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেছেন। তাঁদের ছাড়াও বাবুল নামের একজন পলাতক।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও জুয়েলের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পল্লবী থানা-পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুয়েল ইয়াবা সেবন করেন ও ব্যবসা করেন। ১৭ নভেম্বর রাত তিনটার দিকে তিনি পল্লবীতে সিটি করপোরেশনের মার্কেটের চারতলায় গিয়ে দেখেন, তানভীরকে আসামি রহিদ ও কাল্লু গেঞ্জি ধরে টেনে ভেতরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর বাবুল পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছেন। একপর্যায়ে রহিদ তানভীরকে চারতলার মেঝেতে ফেলে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে রাখেন। বাবুল তানভীরকে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে পেটাতে থাকেন আর কাল্লু এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে তানভীর অচেতন হয়ে পড়েন। তখন আসামিদের মধ্যে দুজন তানভীরের দুই হাত ও বাবুল দুই পা ধরে তাঁকে চারতলার লিফটের ফাঁকা জায়গা থেকে নিচে ফেলে দেন। এরপর সবাই যার যার মতো দেয়াল টপকে চলে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ক্রিকেটের স্টাম্প–সদৃশ ভাঙা কাঠের লাঠি জব্দ করেছে।
পুলিশের তথ্য বলছে, মাদক কারবারি জুয়েলের বিরুদ্ধে ছয়টি মাদকের মামলা রয়েছে। অপর আসামি রহিদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির পৃথক দুটি মামলা রয়েছে। পল্লবী এলাকায় তিনি নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। অপর আসামি কাল্লুর বিরুদ্ধেও মাদকের একটি মামলা রয়েছে।
নিহত তানভীরের ভাই ইমরান বলেছেন, ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
0 coment rios: