রিলেশনশিপ ইসলামে নিষিদ্ধ কেন? এর শাস্তি ও সমাধানের উপায়
ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর পেছনে
রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। নিচে এই কারণগুলো, এর শাস্তি এবং সমাধানের উপায় নিয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ধর্মীয় নির্দেশনা
ইসলাম ধর্মে আল্লাহ্র নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা
হয়েছে।
কোরআন:
১.আল্লাহ্ বলেন, "তোমরা
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।" (সূরা
আল-ইসরা, ১৭:৩২)
২. "আর
তারা যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য ডাকে না এবং তারা নির্দোষ প্রাণকে হত্যা করে
না, যা আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করেছেন। এবং তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। আর যারা
এসব করে, তারা পাপের শাস্তি পাবে।" (সূরা আল-ফুরকান,
২৫:৬৮)
হাদিস:
১. নবী
মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
"কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সাথে নির্জনে একত্রে না থাকে,
যদি না সে নারীর মাহরাম (অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়) হয়।"
(সহীহ মুসলিম)
২. "যখন
কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করে,
তখন সে বিশ্বাসী অবস্থায় থাকে না, এবং
যখন সে মদ্যপান করে, তখনও সে বিশ্বাসী অবস্থায় থাকে
না।" (সহীহ বোখারী)
সামাজিক স্থিতিশীলতা
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পরিবার ও
সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। ইসলামে বিবাহ একটি
পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয় যা পরিবার ও সমাজকে স্থিতিশীল রাখে।
নৈতিকতা ও চরিত্র গঠন
ইসলাম ধর্মে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিবাহ
বহির্ভূত সম্পর্ক মানুষের নৈতিকতা ও চরিত্রকে দুর্বল করে এবং পাপের দিকে ধাবিত
করে। ইসলামে পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্যগত কারণ
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন যৌন সংক্রমণ ও অন্যান্য রোগ।
ইসলামে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিবাহ বহির্ভূত
সম্পর্ক এ থেকে বিরত থাকার একটি উপায়।
মানসিক শান্তি
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক মানসিক অশান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। ইসলামে
মানসিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহ একটি নিরাপদ ও
স্থিতিশীল সম্পর্কের মাধ্যমে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
শাস্তি
ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। শাস্তির
ধরন নির্ভর করে অপরাধের প্রকৃতি ও পরিস্থিতির উপর। উদাহরণস্বরূপ:
- যদি
বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়: ইসলামে এর শাস্তি হলো পাথর
নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড।
- যদি
অবিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়: এর শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত।
সমাধানের উপায়
ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য কিছু সমাধানের উপায়
রয়েছে:
1. তওবা (পাপের অনুশোচনা ও প্রত্যাবর্তন): পাপ থেকে ফিরে এসে আল্লাহ্র কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করা।
2. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা): আল্লাহ্র কাছে পাপের জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করা।
3. ইবাদত (উপাসনা): নিয়মিত ইবাদত ও উপাসনা করা।
4. কোরআন তিলাওয়াত ও হাদিস চর্চা: কোরআন তিলাওয়াত এবং হাদিস চর্চা
করা।
5. জিকির ও দোয়া: নিয়মিত জিকির ও দোয়া করা।
6. সত্যবাদিতা ও নৈতিকতা: সত্য কথা বলা, ধৈর্যশীল থাকা, অন্যের সাথে সদাচরণ করা।
7. আত্মসমালোচনা ও আত্মনিরীক্ষণ: প্রতিদিন নিজের কাজগুলো মূল্যায়ন
করা এবং ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করা।
উপসংহার
ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ করার পেছনে রয়েছে ধর্মীয়, সামাজিক, নৈতিক,
স্বাস্থ্যগত এবং মানসিক কারণ। ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা এবং
বিবাহের মাধ্যমে পবিত্র ও স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলা একজন মুসলিমের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
0 coment rios: