মঙ্গলবার, জানুয়ারী ১৬, ২০২৪

সন্তান নেওয়ার আগে ৯টি বিষয় নিশ্চিত করুন: ডা. মারুফা খাতুন

 ডা. মারুফা খাতুন

সহকারী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু আমাদের সবার কাম্য। তাই প্রতিটি গর্ভধারণ হওয়া উচিত সুপরিকল্পিত ও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। এক দম্পতি যখন সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন থেকেই কিছু বিষয় তাঁদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে—

১. সন্তান নেওয়ার সময়ের পরিকল্পনা: আজকাল ক্যারিয়ার–ভাবনা ও অন্যান্য কারণে সন্তান নিতে দেরি হয়ে যায়। তবে গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ বছরের পর মেয়েদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা দ্রুতই কমতে থাকে এবং ৩৫ বছরের পর তা বেশ কমে যায়। আবার মা–বাবার বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশু জন্মের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ক্যারিয়ার, লেখাপড়া—সবকিছু সমন্বয় করে স্বামী-স্ত্রী দুজনের সম্মতিতে সঠিক সময়ে সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

২. জীবনযাত্রার পরিবর্তন: অন্য সবার মতো হবু মা-বাবাকেও অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড গ্রহণ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, ধূমপান-মদ্যপান বন্ধ করতে হবে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, রাতে সঠিক সময়ে ঘুমানো ও সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসও জরুরি।

৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: বিশেষ করে হবু মায়ের খাদ্যতালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন, আমিষসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন বিভিন্ন ধরনের শস্য, বাদাম, সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা ও বিভিন্ন মৌসুমি ফল।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন অথবা খুবই কম ওজন—দুটিই গর্ভকালীন জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই হবু মায়ের ওজন বেশি হলে কমাতে হবে, কম থাকলে উচ্চতা অনুযায়ী বাড়াতে হবে।

৫. জরুরি পরীক্ষা ও চিকিৎসা: গর্ভধারণের আগেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। যেমন রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, জন্ডিস প্রভৃতি নির্ণয়ের পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় কোনো রোগ নির্ণয় হলে গর্ভধারণের আগেই সেগুলোর চিকিৎসা করাতে হবে।

৬. ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ: ফলিক অ্যাসিডের অভাবে বাচ্চার মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। তাই বাচ্চা নেওয়ার এক মাস আগ থেকে এবং যাঁদের আগের বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ছিল, সেসব মায়ের তিন মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড ওষুধটি খেতে হবে।

৭. ওষুধ পরিবর্তন বা বর্জন: মায়েদের কিছু ওষুধ বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ঘটাতে পারে। যেমন ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার ওষুধ, মৃগীরোগ ও ক্যানসারের ওষুধ। এসব রোগের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিবর্তন বা বর্জন করতে হবে।

৮. টিকা: যাঁরা রুবেলা ও হেপাটাইটিস বির টিকা নেননি, তাঁদের গর্ভধারণের আগেই টিকাগুলো নিতে হবে। রুবেলার টিকা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে গর্ভধারণ করা নিষেধ।

৯. অর্থনৈতিক প্রস্তুতি: সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন অর্থের। তাই সন্তান নেওয়ার আগে আর্থিক প্রস্তুতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

শেষ কথা, আমরা যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ-স্বাভাবিক দেখতে চাই, তাহলে অবশ্যই গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী সেবা নিশ্চিত করতে হবে।





শেয়ার করুন

Author:

Publisher and dashboard panel controller, NB Article | বাংলা

0 coment rios: