এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের আলোচনা থেকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলি জানা যায়। এ থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, বিবাহে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করবেন কিনা। আর যদি করেনই, তাহলে কিভাবে করবেন। নাকি বর্জন করাই উচিত তাও জানতে পারবেন।
১ ।
প্রশ্ন : বিয়ের সময় বর-কনের গায়ে গলুদ লাগানো হয় এবং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। এগুলো করা কি ইসলামসম্মত?
উত্তর : গায়ে হলুদ শুধু আমাদের কালচার, তা ঠিক নয়। ইসলামী কালচারের মধ্যে এটা আসেনি। কিন্তু এটা কোনো গুনাহের কাজ নয়। এটা যদি ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে ভুল হবে। এটা ইবাদতের বিষয় নয়। এটা হচ্ছে এলাকার প্রচলন হিসেবে। সৌন্দর্যের জন্য এটা করা যেতে পারে। এখন ছেলেরা মেয়েদের আবার মেয়েরা ছেলেদের আনুষ্ঠানিকভাবে গায়ে হলুদ দেয়, তা ঠিক নয়। এগুলো পুরোটাই শরিয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। এই আনুষ্ঠানিকতা ইসলামে কোথাও আসেনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ গায়ে হলুদ মাখে, তাহলে সেটা জায়েজ। অনানুষ্ঠানিকভাবে যদি কেউ সৌন্দর্যের জন্য মেহেদি দিয়ে কাউকে সাজায়, সেটা জায়েজ আছে। (তবে ছেলেরা ছেলেদের এবং মেয়েরা মেয়েদের - এভাবে হতে হবে।)
(ডা: মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ)
২।
৩।
ইসলাম ডেস্ক: বিবাহ জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। এ প্রয়োজন পূরণে সবাই একে অন্যের মুখাপেক্ষী। বিবাহ অতি গুরুত্ববহ একটি ইবাদত এবং নবী কারীম সা. এর একটি সুন্নতও বটে। যেমন- নবী কারীম সা. ইরশাদ করেছেন, বিবাহ আমার একটি সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমূখ-বিতৃষ্ণ হবে, সে আমার উম্মত নয়। তবে প্রশ্ন বিবাহে ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’; কী বলে ইসলাম? এ বিষয়েও আলোচনা থাকছে সামনে।
তাই বিবাহ যেমন মুসলিম জাতির জন্য সুন্নাত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ঠিক তেমনি সেই সুন্নাতকে সুন্নাতি মোতাবেক পরিচালনা অবশ্য কর্তব্য। এই ইসলামে মানব জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রিয় জীবন পর্যন্ত সব কিছুর সঠিক তথ্য নির্ভর প্রমাণ রয়েছে।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশী বেশী কাঁদো এবং কম কম হাসো। তাই বলে কি সব সময় কাঁদবে? একটুও হাসবে না!
মেডিক্যাল সাইন্সের মতে, কোন লোক যদি সব সময় কাঁদে বা আনমনা (অন্য মনস্ক) হয়ে থাকে তাহলে তার ৯৫% মানসিক সমস্যা হতে পারে।
এ কথার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআন ও হাদীসে। সাহাবায়ে কেরাম রা. সব সময় শুধু জাহান্নামের ভয়ে কান্না করার মধ্যে ব্যস্ত না থেকে রাসুল সা. এর কাছে গেলে যখন জান্নাতের কথা আলোচনা করতেন, সাথে সাথে তাঁদের মুখে হাসি ফুটতো। শুধু তাই নয়। বরং তাঁদের মধ্যে কৌতুক জাতিয় কথা বার্তার প্রমাণও পাওয়া যায়।
একদিন হযরত উমর ফারুক, হযরত উসমান গণি এবং হযরত আলী রা. পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন। তখন হযরত উমর ফারুক রা. কৌতুকচ্ছলে আলীকে রা. উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী! তুমি আমাদের দু’জনের মধ্যে নুনের নুকতার মত।
আলী রা. ও কৌতুকচ্ছলে বলেন, নুকতা ছাড়া নুনের কোনো মূল্য নাই। কারণ, হযরত উমর ফারুক, হযরত উসমান গণি রা. হযরত আলী রা. হতে তুলনা মূলকভাবে একটু লম্বা ছিলেন। এরকম অনেক কৌতুকের প্রমাণ মেশকাত শরীফে কৌতুকের বাবে রয়েছে। শুধু কৌতুক কেন? আনন্দ উল্লাস কি নবী কারীম সা. এর জামানায় ছিলনা? অবশ্যই ছিলো। কিন্তু সেটা ইসলামের গণ্ডির ভিতরে।
যেসব আনন্দ উল্লাস আমরা করে থাকি; তার মধ্যে অন্যতম হলো বিবাহের আনন্দ। কিন্তু এ আনন্দেরও মাপকাটি ইসলাম নির্ধারণ করে রেখেছে। এর বিপরীত হলে বিবাহ আনন্দের পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে নেমে আসতে পারে অমাবস্যার ন্যায় কালো অন্ধকার। যা থেকে রেহাই পাওয়ার কোন পথ খোঁজে পাওয়া যাবে না।
আমাদের বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে দেখা যায় এ আনন্দের নামে কুৎসিত কিছু রেওয়াজ বা রীতি। যে রেওয়াজ বা রীতি ইসলামতো স্বীকৃতি দেয় নাই; বরং দিয়েছে অভিসম্পাত। এমনকি এসব অনুষ্ঠানে যোগদান করায় গোনাহে কবীরার পাশাপাশি ঈমানও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
বুখারী শরীফে আছে যে, রুবাই বিনতে মুআওয়েজ ইবনে আফরা রা. বলেন, আমার বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর নবী করীম সা. আমাদের ঘরে আসেন এবং আমার বিছানার উপর বসেন, যেমন তুমি আমার কাছে বসেছ।
অতঃপর তাঁর আগমনে আমাদের কচি কচি মেয়েরা ছোট ঢাক/দফ বাজাতে লাগলো এবং বদর যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ চাচার শোকগাঁথা গাইতে লাগলো। তাদের মধ্যে একজন বলল! আমাদের মাঝে এমন একজন নবী আছেন যিনি আগামীকাল কী হবে তা জানেন। এতদশ্রবণে নবী করীম সা. বললেন, একথা ছেড়ে দাও এবং পূর্বে যা বলছিলে তা বলো।
নিম্নে আমাদের সমাজের কিছু ইসলাম অনুপযুক্ত আনন্দ-উল্লাস বর্ণনার পাশাপাশি এর যথেষ্ট উপযুক্ত আনন্দ-উল্লাস বর্ণনা করা হলো- এক. আমাদের সমাজে বিবাহ হলেই একটি উৎসব করে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে। আর এই সাউন্ড সিস্টেমে বাজানো হয় হিন্দি, বাংলাসহ রোমান্টিকবিভিন্ন অশ্লীল গান। যা নিতান্তই গর্হিত কাজ ও কবিরা গোনাহের পাশাপাশি কুফুরীতে পরিণত হতে পারে।
যেমন- ফতোয়ায়ে শামীতে আছে যে, গান বাদ্যের আওয়াজ শোনা পাপ। সেই সব বৈঠকে বসা ফাসেকী এবং তা হতে স্বাদ উপভোগ বা উল্লাস করা ও আনন্দ করা কুফরী।(বায়যাবীর ফতোয়ায়ে শামী ৬খণ্ড ৩৪৮-৩৪৯পৃঃ দ্রঃ মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর ২০১১ ইং পৃঃ নং ১৮)
দুই. আমাদের সমাজে মুসলিম বিবাহে উৎসব নামক আরো ১টি প্রথা হলো- ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’। সমাজে বিয়ের মতো একটি পবিত্র আয়োজনকে অ-পবিত্র করতে যা যা প্রয়োজন তা সবই করা হয়ে থাকে এই আয়োজনে।
মেয়েকে মঞ্চে সাজিয়ে রেখে প্রদর্শণ করা হয়। আর মেয়ে পক্ষের এবং ছেলে পক্ষের তথা উভয় পক্ষের দর্শনার্থীগণ পাইকারি হারে একজন গায়রে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) মেয়ের শরীরে হাতদ্ধারা স্পর্শ করে হলুদ মেহদি মাখছে।
অপরদিক দিয়ে একজন গায়রে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ) ছেলেকেও শরীরে হাতদ্ধারা স্পর্শ করে হলুদ মেহদি মাখছে। যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে।
তবে বিয়ের সময় বর ও কনেকে সাজানো ও তাদের গায়ে হলুদ মাখানো ইসলামি শরিয়াতে তখনই সম্পূর্ণ জায়েজ ও পছন্দনীয় হবে; যখন তা শরীয়াহ পন্থায় হয়। যেমন- হাদীসে এসেছে- একদা আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. রাসুল সা. এর খেদমতে হাজির হলেন। তখন তাঁর গায়ে হলুদের রং ছিল। রাসুল সা. তাঁকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানালেন; আমি এক আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসুল সা. তা অপছন্দ করেননি। অর্থাৎ চুপ ছিলেন বা মৌন সম্মতি দিয়েছিলেন।
যেহেতু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেহেতু ‘গায়ে হলুদ’ বা ‘হলুদ বরণ’ জায়েজ। সেহেতু লক্ষ্য রাখা উচিত যে, গায়রে মুহাররামগণ যেন বর ও কনেকে স্পর্শ করতে না পারে। তবে বিয়ের দিনে দুপুরে মুহাররাম (যাদের সাথে বিবাহ হারাম) মহিলাগণ বরকে গায়ে হলুদ মেখে দিবে এবং পুরুষগণ গোছল করাবেন। কিন্তু কনের ক্ষেত্রে ভিন্নরুপ বুঝা যায়। আর তা হলো- গায়ে হলুদ মাখা এবং গোছল করানো সম্পূর্ণ দায়িত্ব মহিলাগণ করবেন।
তিন. বিবাহ ছোট বড় যাই হোক না কেন, কনেকে এমনভাবে সাজানো হয় যে, তার প্রকৃত চেহারাটা লোপ পেয়ে যায়। অর্থাৎ কালো চেহারা এমন সাদা হয় যে বুঝা যায় না, সে কনে কালো না ফর্সা। তবে যদি মেকাপ করতে হয়, তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে হুবহু তার চেহারাটা যদি মেকাপ করে অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গকে বিকৃতি না করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে শুধু বরের সামনে নেয়া হয়। তাহলে তা শরিয়াতে বৈধ বলে বিবেচিত করা হয়। কেননা, তার প্রমাণ বহু সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়।
রাসুল সা. উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে খবর পাঠালে, আজওয়াজেস মুতাহহারাগণ সেজে গোঁজে বিশ্বনবী সা. এর সামনে হাজির হতেন। তবে তাঁদের চেহারাতে কোন রুপ পরিবর্তন করেননি।
কারণ, রাসুল সা. সইরশাদ করেছেন, যেসব নারী দেহে উল্কি এনে দেয়, আর যারা এঁকে দেয়, সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত ঘর্ষণকারিনী এবং চোখের পাতা বা ভ্রুর চুল উৎপাটন কারিনী এবং এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনয়নকারীদের আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে এক মহিলা উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি জবাবে উক্ত হাদীস বর্ণনা করলেন এবং বললেন- রাসুল সা. যাকে অভিসম্পাত দিয়েছেন, আমি কেন তাকে অভিসম্পাত করব না। (বুখারী ও মুসলিম)
চার. বিবাহের পরদিন সকালে বর ও কনেকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে সকল মুহাররাম ও গায়রে মুহাররামগণের সামনে বেহায়াপনাভাবে গোছল করানো হয়। আর এই গোছলের সময় ছোট-বড় সকলেই রং, কাদা-মাটি ও মরিচ মিশ্রিত পানি নিয়ে অপরের দেহে ছিটিয়ে উল্লাস করে।
এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালী রহ. তার মাজালিসে গাজ্জালির ১০৪নং পৃষ্টায় নিম্ন রুপ বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো- হযরত পীর ও মোরশেদ {ইমাম গাজ্জালী(র) বললেন, হিন্দু সম্প্রদায় যে প্রতি বৎসর এক নির্দিষ্ট সময়ে আবির খেলে অর্থাৎ রং ছিটায়। আমাদের মধ্যে যদি কেহ তাহা করে তবে তাহার হুকুম কি হতে পারে? তিনিই আবার এরশাদ করিলেন, ইহা কুফরী। কারণ তাহারা পরস্পর যে রং ছিটায় ইহা তাহাদের ধর্মীয় কাজ এবং ধর্মের অনুশাসন।
আমাদের মধ্যে যে কেহ তাহা করিবে তাহাদের অনুসরণ করা হইবে। আর যে তাহাদের ধর্মীয় বিষয়ে তাহাদের অনুসরণ করবে সে কুফরি করেছে। অধিকন্তু কোন মুসলমান যদি তাহার উপর রং ছিটাবার অনুমতি দেয় বা রাজি থাকে তবে সেও কাফের হইবে। হুজুর সা. এরশাদ করেছেন:- কুফরী কাজে রাজি থাকলেও কাফের হবে। ধন্যবাদ
0 coment rios: